স্বদেশ ডেস্ক:
হজ ফ্লাইটের শুরু থেকেই লেগে আছে ভিসা জটিলতা। সৌদি আরবে আটক হয়েছেন এক হজ এজেন্সির মালিক। কোনো কোনো এজেন্সি আবার হোটেল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় এখনো অন্তত ৩৫-৪০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। ফলে প্রতিদিনই বিমানের ফ্লাইট ফাঁকা যাচ্ছে। এতে শেষ সময়ে ফ্লাইট বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজেন্সিগুলোর এমন দায়িত্বহীনতায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, হজযাত্রীদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের কিছু শর্ত পূরণ করা এজেন্সিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া, ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা। এসব শর্ত পূরণ হলে হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করে সৌদি দূতাবাস। কিন্তু হজ উদ্বোধনের দিনই ভিসা জটিলতায় পড়েন ১৪০ হজযাত্রী। ভিসা না হওয়ায় সেদিন তাদের ফ্লাইট বাতিল হলে নিয়মিত তদারকি শুরু করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে এজেন্সিগুলোকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। গত ৩১ মে এজেন্সিগুলোকে তিন দিনের মধ্যে
ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা করতে ব্যর্থ এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেওয়া হয় চিঠিতে।
এদিকে, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ভিসা দ্রুত সম্পন্ন করতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে চিঠি দিয়েছেন সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ। এরপরই এজেন্সিগুলোকে তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের ভিসা ধীরগতির কারণে হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রায়ই খালি সিট নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে বিমানের ফ্লাইট। হজযাত্রী সংকটে এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। ফলে শেষ মুহূর্তে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে চাপ বাড়বে। এতে শেষ সময়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারেন বেশ কিছু হজযাত্রী। বাংলাদেশ বিমান সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৮ দিনে প্রায় ৮০ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছাতে হবে। আগামী ২২ জুন ঢাকা থেকে হজযাত্রার শেষ ফ্লাইট ছেড়ে যাবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তারপরও কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ছে বলে জানান তারা। কর্মকর্তারা বলেন, নিয়মানুযায়ী তাদের বিষয়ে যে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে তা নেওয়া হবে। তাদের কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হোক এটা সহ্য করা হবে না।
হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল রবিবার আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভিসা নিয়ে জটিলতা পুরনো তথ্য। এখন আর ভিসা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। ভিসা হচ্ছে, লোক যাচ্ছে।’
এ বছর গত ৪ জুন রাত ২টা পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৪ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৮৯ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ৪০ হাজার ৯২৫ জন। এ পর্যন্ত ৭৮ হাজার ৩২১ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল হজ সম্পর্কিত প্রতিদিনের বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, হজযাত্রীদের ভিসা অনুযায়ী হোটেলে না উঠিয়ে অন্য হোটেল ভাড়া করে জটিলতা সৃষ্টি করায় আটটি হজ এজেন্সিকে গত মঙ্গলবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে : আল কাশেম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ইউরো বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম, ইউরোপা ট্রাভেলস, কে আই ট্রাভেলস, এল আর ট্রাভেলস, এন জেড ফাউন্ডেশন অ্যান্ড হজ মিশন, শাকের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং সানজারি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস। এ ছাড়া ভিসা পাওয়ার আগেই এক হজযাত্রীর সন্তানের বিমানের টিকিট কাটায় কেয়া ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সৌদি আরবে আটক হয়েছেন বাংলাদেশি হজ এজেন্সির মালিক ও তার ছেলে। নির্ধারিত পরিমাণের বেশি রিয়াল বহনের দায়ে তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় ৮২৩ জন হজযাত্রীর সৌদিতে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়লে তাদের হজে যেতে সহযোগিতা করে হাব।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ৬০৩টি। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২ জুলাই আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২ আগস্ট।